প্রকাশিত: ০৯/০৫/২০১৭ ৭:২১ এএম , আপডেট: ০৯/০৫/২০১৭ ৭:২৪ এএম

তিনি একজন নারী পুলিশ কনস্টেবল। নাম তাওহীদা আক্তার। খুলনা জেলা পুলিশ লাইনে কর্মরত। দেড়মাস আগে বাগেরহাট থেকে আকস্মিকভাবে নিখোঁজ হয় তার বড় বোন লাকী বেগমের মেয়ে। তাকে খুঁজতে ১ মে খুলনা থেকে চট্টগ্রামে আসেন তাওহীদা। ভিক্ষুকের বেশে নগরীর বিভিন্ন বস্তিতে ঘুরে অবশেষে সেই মেয়েকে উদ্ধার করেন তিনি। একইসঙ্গে মেয়েটিকে ‘ফুসলিয়ে’ চট্টগ্রাম নিয়ে আসা বাবুল ফরাজীকেও (৩৫) আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছেন। ৬ মে রাত আড়াইটার দিকে বায়েজিদ বোস্তামি থানার ট্যানারি বটতলের খলিলশাহ মাজারের পাশের একটি বাসা থেকে বাবুলকে আটক ও মেয়েটিকে উদ্ধার করেন তাওহীদা।

এ বিষয়ে বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন জানান, বাগেরহাট থেকে এবার এসএসসি পাস করা মেয়েটিকে চট্টগ্রামে নিয়ে এসেছিল বাবুল। কনস্টেবল তাওহীদা চট্টগ্রামে এসে ভিক্ষুক সেজে বাবুল ও মেয়েটিকে খুঁজে বের করে। এরপর সহযোগিতা চাইলে আমরা ভিকটিম ও আসামিকে নিয়ে আসি। বায়েজিদ বোস্তামি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুহাম্মদ মঈন উদ্দীন বলেন, আসামি ও ভিকটিমকে নেওয়ার জন্য বাগেরহাট সদর থানায় যোগাযোগ করি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসে আসামি ও ভিকটিমকে নিয়ে গেছেন।

এ বিষয়ে তাওহীদা জানান, তার বড় বোনের মেয়ে ঘটনার শিকার। তাকে প্রলোভন দেখিয়ে নিকটাত্মীয় বাবুল চট্টগ্রামে নিয়ে এসে জোরপূর্বক বিয়ে করে। মেয়ের শোকে লাকী কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। বোনের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে তিনি নিজেই তাদের খুঁজতে চট্টগ্রামে চলে আসেন।

বাবুল বরগুনার পাথরঘাটার ছয়েরাবাদ গ্রামের নূর মোহাম্মদ ফরাজীর ছেলে। পেশায় কাঠমিস্ত্রি বাবুলের প্রথম স্ত্রীর ঘরে তিন সন্তান আছে। লাকীর বাড়ি বাগেরহাটের সদরের কাড়াপাড়া গ্রামে।

তাওহীদা আরো জানান, ২২ মার্চ বাবুল লাকীর মেয়েকে নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এক মাস ধরে তারা বিভিন্নভাবে আত্মীয়স্বজনের বাসায় খোঁজাখুঁজি করে। একসময় জানতে পারে, বাবুলই মেয়েটিকে নিয়ে গেছে।

এই ঘটনায় লাকী বাদি হয়ে বাবুল ও তার ভাই হাবিব ফরাজী, বোন নিঠু বেগমসহ অজ্ঞাতনামা ৩-৪জনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলায় পুলিশ হাবিব ও তার ছেলেকে গ্রেফতার করে।

তাওহীদা জানান, ২৬ এপ্রিল খবর আসে বাবুল মেয়েটিকে নিয়ে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর হাজী ক্যাম্পের কাছে একটি বস্তিতে আছে। তিনি ১মে চট্টগ্রামে এসে নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (ফোর্স) আশিকুর রহমানের কাছে দামপাড়া পুলিশ ব্যারাকে থাকার অনুমতি চান। ছদ্মবেশে ভিকটিম ও আসামি ধরার বিষয়টি তিনি সহকারী কমিশনারকে অবহিত করেন।

প্রথমে পাহাড়তলী হাজী ক্যাম্প এলাকায় ভিক্ষুকের বেশে কয়েকটি বস্তি এবং রিকশার গ্যারেজে ঘুরে বাবুল ও মেয়েটির ছবি দেখিয়ে সন্ধান জানতে চান। কিন্তু সন্ধান না পেয়ে বায়েজিদ বোস্তামি থানার বালুচড়া এলাকায় যান। সেখানে সেলুনের দোকানের এক কর্মচারী বাবুলের ছবি দেখে চিনতে পেরে জানায় সে ট্যানারি বটতল এলাকায় আছে।

তাওহীদা ভিক্ষুকের বেশে বটতল দানবাক্স এলাকায় গিয়ে কয়েকজনকে ছবি দেখালে একজন বাবুলকে চিনে ফেলে। ওই লোক তাওহীদাকে স্থানীয় শ্রমিক লীগের এক নেত্রীর কাছে নিয়ে যান। ওই নেত্রী সব শুনে বাবুলের বোন খাদিজার বাসা খুঁজে বের করেন। শুক্রবার লাকী বেগমও চট্টগ্রামে আসেন। ওইদিন রাতে লাকী ও তাওহীদা খাদিজার বাসায় যান।

খাদিজা প্রথমে তার ভাই কোথায় আছে সেটা বলেনি। ভয় দেখানোর পর সে বাবুলের ঠিকানা জানায়। বিয়ের কথাও জানায়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাগেরহাট সদর থানার এসআই ফজলুল হক বলেন, ভিকটিম ও আসামিকে বাগেরহাট থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কনস্টেবল তাওহীদাকে সাক্ষী হিসেবে রাখা হবে।

তাওহীদা বলেন, আমার বোনের স্বামীর দুইটা কিডনি নষ্ট। মেয়েকে অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করাচ্ছে। নাবালিকা মেয়েটার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে বাবুল। বোনের কষ্ট সহ্য করতে না পেরেই ভিক্ষুকের বেশ নিয়েছিলাম।

পাঠকের মতামত

ইনানীতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

অবশেষে কক্সবাজারে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং অত্যাধুনিক ফায়ার স্টেশন। অর্থনৈতিক এবং ...